Advertisement

প্রজাতি (Species)

 দৈনন্দিন জীবনে আমরা বিজ্ঞান অধ্যয়নকালে " প্রজাতি (Species) " শব্দটির সাথে অনেকবার সম্মুখীন হই,কিন্তু আমরা অনেকে এই প্রজাতির আসল ব্যাখাটা বুঝি না। এই আর্টিকেলটিতে প্রজাতি শব্দটিকে খুবই সাধারণভাবে ব্যাখা করা হয়েছে। 

সাধারণত প্রজাতি হচ্ছে " একদল জীব যাদের মধ্যে সর্বাধিক মিল বিদ্যমান "। অর্থাৎ একদল জীব (প্রাণী, উদ্ভিদ ইত্যাদি) যারা দেহের আকার-আকৃতি, দেহের বর্ণ, প্রজনন, স্বভাব, খাদ্য, বাসস্থান নির্বাচন প্রভৃতি বিষয়ে সবচেয়ে বেশি মিলসম্পন্ন তাদেরকে একই প্রজাতি বলা হয়।

প্রজাতির আরো সুস্পষ্ট সংজ্ঞা এভাবে দেয়া হয় - " প্রাকৃতিক পরিবেশে কোনো জীবগোষ্ঠী যদি নিজেদের মধ্যে যৌন মিলন ঘঠিয়ে উর্বর সন্তান উৎপাদন করতে সক্ষম হয়,তবে তাদেরকে প্রজাতি বলে "

অর্থাৎ এই সংজ্ঞা থেকে স্পষ্ট যে প্রজাতি হতে হলে দুটি বৈশিষ্ট্য থাকতেই হবে - 

১/ এরা প্রাকৃতিক পরিবেশে নিজে থেকে যৌন মিলন করতে হবে

২/ মিলনের ফলে উৎপন্ন সন্তানাদি জননক্ষম (উর্বর) হতে হবে

বাঘ এবং সিংহ প্রাকৃতিক পরিবেশে যৌনমিলন করে না,তবে খাঁচায় বন্দি থাকা অবস্থায় করে।সাধারণত পুরুষ সিংহ এবং স্ত্রী বাঘ (বাঘিনী) এর যৌন মিলনের ফলে " লাইগার (Liger) " নামক এক প্রকার প্রাণীর জন্ম হয় যা সবচেয়ে বড় বিড়ালজাতীয় প্রাণী। আবার, পুরুষ বাঘ আর স্ত্রী সিংহীর যৌন মিলনে " টাইগন (Tigon) " নামক এক প্রকার প্রাণীর সৃষ্টি হয়।

বাঘ এবং সিংহের ক্ষেত্রে তারা উর্বর সন্তান দেয় ঠিকি কিন্তু তারা যেহেতু উপরের সংজ্ঞার ১ম বৈশিষ্ট্যটি অর্থাৎ প্রাকৃতিক পরিবেশে নিজে থেকে যৌন মিলন করে না তাই এই সংজ্ঞা অনুযায়ী বাঘ (Panthera tigris) ও সিংহ (Panthera leo) ভিন্ন দুটি প্রজাতি।


ছবি : লাইগার ও টাইগার (Collected from Wikipedia) 

আবার ঘোড়া এবং গাধা প্রাকৃতিক পরিবেশে নিজে থেকে যৌন মিলন করে " খচ্চর " নামক প্রাণীর জন্ম দেয়,কিন্তু এই খচ্চর অনুর্বর হওয়ার কারণে ঘোড়া এবং গাধা ভিন্ন ভিন্ন দুটি প্রজাতি। 

প্রজাতি বুঝে থাকলে যেকোনো প্রাণীর শ্রেণীবিন্যাসে আর কোনো সমস্যা হয় না।যেমন: সর্বাধিক মিলসম্পন্ন কিছু প্রজাতি মিলে একটি গণ (Genus)। সর্বাধিক মিলসম্পন্ন কিছু গণ মিলে একটি গোত্র (Family)। সর্বাধিক মিলসম্পন্ন কিছু গোত্র মিলে একটি বর্গ (Order) ইত্যাদি।  

এই নিয়মটি অনেক সময় প্রযোজ্য নাও হতে পারে,কারণ অনেক প্রাণী বা উদ্ভিদ প্রজাতি আছে যারা শুধুমাত্র অযৌন জনন (Asexual Reproduction)  করে থাকে, কিংবা অনেকে অঙ্গজ জনন (Vegetative Reproduction), কুড়িঁ (Budding) বা পার্থেনোজেনেসিস (Parthenogenesis) ইত্যাদির মাধ্যমে প্রজনন সম্পন্ন করে থাকে। সেক্ষেত্রে প্রজাতি নির্ণয়ে অনেক বৈজ্ঞানিক গবেষণা করতে হয়। কোষের সংখ্যা (Number of Cell), খাদ্যভাস, বাসস্থান নির্ণয়, দেহের আকার (Size of Body), দেহের সংগঠন ক্রমমাত্রা (Grade of Organisation of Body), ক্লীভেজ বা সম্ভেদ (cleavage), জীবন পদ্বতি (Way of Life), ভ্রুণস্তর (Germ Layers), ডিএনএ এবং আরএনএ ইত্যাদি দ্বারা প্রজাতি হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করতে হয়।

Post a Comment

0 Comments