" যুদ্ধ বিমান " শব্দটি প্রথম ব্যাবহার করা হয় ১ম বিশ্ব যুদ্ধের পর থেকে। ১৯০৬ সালে বিমান আবিষ্কারের পর থেকে একে যুদ্ধের কাজে ব্যাবহার করার জন্য ব্যাপক গবেষনা শুরু হয়।
আমরা যেসব বেসামরিক বিমানগুলো দেখি যুদ্ধ বিমান সেরকম হয়না। যুদ্ধ বিমান সাধারণ বিমানগুলোর চেয়ে আকারে অনেক ছোট হয় এবং এগুলোর গতি সাধারণ পরিবহন বিমানগুলোর চেয়ে অনেক বেশি থাকে। এগুলোতে কোনো যাত্রী পরিবহনের জায়গা থাকেনা, সর্বোচ্চ ১-২ জন ক্রু থাকে।
১ম বিশ্ব যুদ্ধ চলাকালীন সময়ে যেসব যুদ্ধ বিমান তৈরী হয়েছিলো সেগুলো ছিলো কাঠের তৈরী ফ্রেমের এবং এগুলোর বেগ ছিলো ঘন্টায় প্রায় ১০০ কিলোমিটার । পরে দ্বিতীয় প্রজন্মের বিমান তৈরী হলো লোহার ফ্রেমে এবং এগুলোর বেগ ছিলো ঘন্টায় প্রায় ৪০০ কিলোমিটার। উপরোল্লিখিত বিমানগুলো কেবল আকাশ থেকে ভূমিতে বিভিন্ন স্থাপনা ধ্বংসের কাজে ব্যাবহৃত হতো।
বর্তমানে আমরা উন্নত বিজ্ঞান এবং প্রযুক্তির যুগে বাস করছি। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির উন্নয়নের ফলে এখন যুদ্ধ বিমানগুলোতেও ব্যাপক আধুনিকায়ন সম্ভব হয়েছে। বর্তমান প্রজন্মের যুদ্ধ বিমানগুলো আকাশ থেকে আকাশে, আকাশ থেকে ভূমিতে, আকাশ থেকে সমুদ্রে ইত্যাদি জায়গাতে আক্রমণ করতে সক্ষম এবং এগুলোতে রাডার, মিসাইল, বোমা, ভারচুয়াল স্কিন ইত্যাদি সংযোজনের ফলে এগুলো এখন ভয়ংকর দানবে পরিণত হয়েছে।
ইঞ্জিনের উপর ভিত্তি করে যুদ্ধ বিমানকে দুটি শ্রেণীতে ভাগ করা যায়।
১/ সিঙ্গেল ইঞ্জিন বিশিষ্ট ফাইটার (যেমন : চীনের জে-১০, চেংদু এফ-৭, মার্কন যুক্তরাষ্ট্রের এফ-৩৫)
২ / ডাবল ইঞ্জিন বিশিষ্ট ফাইটার (যেমন : রাশিয়ার মিগ-২৯, মিগ-৩৫)
![]() |
ছবি : F-35 Fighter ( S: Pixabay) |
কাজের ধরনের উপর ভিত্তি করে যুদ্ধ বিমান ৪ প্রকার। যথা :
১/ Interceptor
২/ Fighter
৩/ Attack
৪/ Multirole Fighter
ইন্টারসেপ্টর (Interceptors)
ইন্টারসেপ্টরের কাজ হলো আক্রমণকারী বিমানকে প্রতিহত করা । এটি বোম্বারের মত শক্তিশালী বিমানের সাথে মোকাবেলা করার ক্ষমতা রাখে। এর তেলের ট্যাংক ছোট হয় কারন একে বেশি দূরে উরে যেতে হয় না। সেই তেলের ভার কমিয়ে সেখানে ভারী অস্ত্র বহন করা হয়। উদাহরণ: চীনের চেংদু এফ-৭ ( Chengdu F-7)
ফাইটার (Fighters)
ফাইটারের কাজ হলো আক্রমণকারী কোনো ফাইটারের সাথে ডগফাইট করা। এদের মূল কাজ আকাশ থেকে আকাশে যুদ্ধ পরিচালনা করা। এগুলো ইন্টারসেপ্টরের চেয়ে ছোট হয়ে থাকে। কারন দ্রুত গতি এবং দিক পরিবর্তন করা এদের প্রধান কাজ। ফাইটারগুলো ছোট হয় কারন একে ভারী অস্ত্র বহন করতে হয় না। তাই এদের তেলের ট্যাংক বড় হয় কারন একে অনেক দূরে গিয়ে শত্রুকে মোকাবিলা করতে হয় অথবা শত্রুপক্ষের বিমানকে তারিয়ে অনেক দূরে নিয়ে যেতে হয়।
উদাহরণ: রাশিয়ার মিগ-২১ ( Mig-21)
অ্যাটাক যুদ্ধবিমান (Attack Aircraft)
এটাক ফাইটারগুলোর কাজ হলো আকাশ থেকে ভূমিতে থাকা মিলিটারি বেস, বিমানবন্দর, সমুদ্র বন্দর, ট্রাক, এপিসি, ট্যাংক ইত্যাদিকে ধ্বংস করা। এসব বিমানের গতি অন্য ফাইটারগুলোর চেয়ে অনেক কম হয়ে থাকে। এসব বিমানের ডানায় শক্তিশালী আর্মর ব্যাবাহর করা হয়।এগুলো ফাইটারের চেয়ে অতিরিক্ত অস্র বহন করতে পারে।উদাহরণঃ চীনের ন্যানচাং এ-৫ (Nanchang A-5), আমেরিকার এ-১০ থান্ডরবোল্ট (A-10 Thunderbolt)
![]() |
ছবি : A-10 Thunderbolt Aircraft ( S : Pixabay) |
মাল্টিরোল ফাইটার (Multirole Fighters)
উপরোল্লিখিত তিন প্রকার বিমানের সমন্বয়ে মাল্টিরোল ফাইটার তৈরী করা হয়েছে। এগুলো উপরে উল্লেখিত সব ধরনের কাজ করতে সক্ষম। আধুনিক প্রায় সব যুদ্ধবিমানগুলো মাল্টিরোল বা বহুমুখী হয়ে থাকে।
উদাহরণ : চতুর্থ প্রজন্মের সব যুদ্ধ বিমান
জেনারেশনের উপর ভিত্তি করে যুদ্ধ বিমানগুলো ১-৬ প্রজন্ম এই ৬টি শ্রেণীতে ভাগ করা যায়। উপরে ১ম এবং ২য় প্রজন্মের বিমানগুলোর কথা আলোচনা করা হয়েছে , এখানে ৩-৬ প্রজন্মের আলোচনা করা হবে।
৩য় প্রজন্মের ফাইটার : এগুলো দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধের পরে তৈরী করা হয়। এগুলোর একেকটিকে একেক ধরনের কাজে ব্যাবহার করা হতো। যেমন উপরে উল্লেখ করা হয়েছে। বর্তমানে পৃথিবীর প্রায় কোনোদেশই ৩য় প্রজন্মের ফাইটার ব্যাবহার করে না। যা ছিলো সবগুলো অবসরে পাঠানো হয়েছে।
৪র্থ প্রজন্মের ফাইটার : এই শ্রেণীর বিমানগুলো সাধারণত মাল্টিরোল হয়ে থাকে। এগুলোর মধ্যে আধুনিক রাডার, মিসাইল এবং বোমা ব্যাবহার করা হয়। অনেক চতুর্থ প্রজন্মের ফাইটার সেমি- স্টিলথ হয়ে থাকে। এগুলো অনেক বেশি ওয়েপন ক্যারি করতে পারে। এগুলোতে অস্র বহনের জন্য হার্ড পয়েন্ট থাকে।
৫ম প্রজন্মের ফাইটার : এই ফাইটারগুলো সম্পূর্ণ স্টিলথ (রাডারে একেবারে ছোট করে দেখা যায়)।এই ফাইটারগুলোতে কোনো হার্ড পয়েন্ট ব্যাবহার করা হয়না। এগুলোতে আধুনিক শক্তিশালী রাডার, এভয়নিক্স, মিসাইল, লেজার গাইডেড বোমা ইত্যাদি ব্যাবহার করা হয়। বর্তমানে কেবল আমেরিকা,চীন এবং রাশিয়া ৫ম প্রজন্মের ফাইটার তৈরী করতে পেরেছে। তুরস্ক, ভারত, পাকিস্তানসহ আরো অনেক দেশ তৈরীর চেষ্টা চালাচ্ছে।
৬ষ্ঠ প্রজন্মের ফাইটার : এগুলো এখনো সার্ভিসে আসেনি তাই এগুলো নিয়ে এখনো শিওর কিছু বলা যাবে না। শুধুমাত্র শুনা যাচ্ছে আমেরিকা এবং জাপান এটি তৈরীর চেষ্টা চালাচ্ছে।
বর্তমান বিশ্বের জনপ্রিয় কয়েকটি ফাইটারঃ
চতুর্থ প্রজন্মের ফাইটার -
General Dynamic F-16 Fighting Falcon ( আমেরিকা)
McDonnell Douglas F-15 Strike Eagle ( আমেরিকা)
Eurofighter Typhoon ( যুক্তরাজ্য, স্পেন ও ইতালি)
Desalt Rafal ( ফ্রান্স)
Sukhoi Su-30 ( রাশিয়া)
Sukhoi Su-35 ( রাশিয়া)
Mikoyan Mig-35 ( রাশিয়া)
Boeing F/A-18 Super Hornet ( আমেরিকা)
পঞ্চম প্রজন্মের ফাইটার -
Lockheed Martin Fa-22 Raptor ( আমেরিকা)
Lockheed Martin F-35 lighting ।। ( আমেরিকা)
Sukhoi Su-57 ( রাশিয়া)
Chengdu J-20 ( চীন)
Chengdu J-31 ( চীন)


0 Comments