Advertisement

কুঁইচা বা কুঁচে মাছ ( Asian Swap Eel)

কুইচা (Asian swamp eel) একটি ইল-প্রজাতির মাছ। Chordata পর্বের Actinopterigi শ্রেণির Sybranchidae (জলজ ইল'দের গোত্র) পর্বের এই মাছটির বৈজ্ঞানিক নাম Monopterus cuchia

বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে একে বিভিন্ন নামে ডাকা হয়, যেমন: কুইচা,কুঁইচা, কুঁচে, কুঁচে মাছ, কুচিয়া, কুইচ্চা (সিলেট), কুচে বাইম, কুচ্চা মাছ (ময়মনসিংহ) ইত্যাদি।

কুইচার দেহ অনেকটা সাপের মতো হওয়ার কারণে বাংলাদেশের মানুষ এটিকে খেতে দ্বিধাবোধ করে থাকেন (বাংলাদেশের মানুষ ইল মাছ সম্পর্কে খুব একটা জানেন না, এজন্য হয়তো এটাকে সাপ ভাবেন)। কুইচাকে সাপের মতো দেখতে হলেও প্রকৃতপক্ষে কুঁচিয়া এক প্রকার মাছ,এটিতে সাপের কোনো বৈশিষ্ট্যই নেই। কুইচা মাছ সাধারণত ২৫ থেকে ৪০ সেন্টিমিটার লম্বা হয়,কিন্তু ৮০ সেন্টিমিটার পর্যন্ত লম্বা কুইচাও পাওয়া গেছে।এদের দেহ সিলিন্ড্রিক্যাল আকৃতির এবং দেহে ক্ষুদ্রাকৃতির আঁশ বিদ্যমান যার বেশিরভাগ অংশই চামড়ার নিচে সজ্জিত থাকে।


ছবি : কুচে মাছ (Collected from iNaturalist

কুঁচিয়া মাছ খুবই রাক্ষুসে স্বভাবের একটি মাছ।এদের খাদ্য তালিকায় রয়েছে বিভিন্ন প্রজাতির ছোট মাছ,চিংড়ি, কৃমি,কচ্ছপের ডিম,বিভিন্ন জলজ পোকা, মৃত প্রাণীর দেহাবশেষ, মাটিতে বিদ্যমান বিভিন্ন জৈব বস্তু ইত্যাদি।  

কুচিয়া মাছ গর্তবাসী তাই জমির আইল, পুকুরের পাড়,বেড়ির বাধ ইত্যাদিতে গর্ত করে বাস করে।

কুচিয়ার বেশ কয়েকটি ঔষধি গুন রয়েছে।এটি শারীরিক দুর্বলতা, রক্তশূন্যতা, অ্যাজমা রোগ, ডায়াবেটিস, বাতজ্বর, পাইলসসহ অনেক রোগ সারাতে মহৌষধের মতো কাজ করে।ফসলের জন্য ক্ষতিক্ষারক পোকার লার্ভা, শামুক, কৃমি ইত্যাদি খেয়ে কুঁচিয়া কৃষকের উপকার করে।

কুচে মাছকে বাংলাদেশসহ, ভারত,পাকিস্তান, নেপাল, মায়ানমার প্রভৃতি অঞ্চলে পাওয়া যায়।এদেরকে প্রধানত পাহাড়ী অঞ্চলের অগভীর খাল, বিল, হাওড়-বাওড়, পুকুর ও পানি জমা বিভিন্ন মাটির গর্তে পাওয়া যায়।এরা পুকুরের কাদার নিচেও অনেক দিন পর্যন্ত বেঁচে থাকতে পারে।

কুচে মাছের আরেকটি প্রজাতিকে (Monopterus albus) মায়ানমার, ভিয়েতনাম,চীন,থাইল্যান্ড, লাওস,ইন্দোনেশিয়া প্রভৃতি দেশে ধানের সাথে চাষ করা হয় এবং এটি প্রোটিনের অন্যতম উৎস হিসেবে বিক্রি করা হয়।

কুঁচিয়া মাছের রপ্তানি চাহিদাও খুব দ্রুত বাড়ছে।বাহিরের দেশগুলোতে এর অনেক চাহিদা রয়েছে এবং বাংলাদেশ কুঁচিয়া রপ্তানি করে ইতিমধ্যে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা আয় করছে।তাই কুঁচিয়া মাছের বাণিজ্যিক খামার বাংলাদেশের একটি সম্ভাবনাময় খাত হতে পারে এবং বাণিজ্যিকভাবে একে উৎপাদনে আমাদের সবার পদক্ষেপ নেয়া উচিত। 

Post a Comment

0 Comments