Advertisement

কোষ বিভাজন (Cell Division)

আচ্ছা কখনো কি আপনার মনে হয়েছে একটি ছোট শিশুর দেহ কীভাবে বৃদ্ধি পেয়ে একজন পূর্ণাঙ্গ মানুষে পরিণত হয়? কীভাবে একটি বীজ একটি বৃহদাকৃতির বট গাছে পরিণত হয়? কিংবা আপনার শরীরের কোনো ক্ষত কীভাবে পূরণ হয়?

উপরিউক্ত ঘটনাগুলোর পিছনে যে কারণটি দায়ী তা হলো - কোষ বিভাজন (Cell Division)। কোষ বিভাজন বুঝতে হলে আগে কোষ সম্পর্কে জানতে হবে।

কোষ হচ্ছে জীবদেহের ভৌত ও কার্যিক একক।প্রতিটি জীবদেহই কোষ দিয়ে তৈরী, সেটা হোক এককোষী ব্যাকটেরিয়া কিংবা ট্রিলিয়ন কোষের সমাহার মানুষ।এককথায় বলতে গেলে প্রাণীদেহকে যদি একটি বিল্ডিং এর সাথে তুলনা করেন তবে কোষ হচ্ছে তার ইট।

আসলে কোষ বিভাজন বলতে বুঝায় একটি কোষ হতে অন্য একটি কোষ সৃষ্টি হওয়াকে। অর্থাৎ " যে প্রক্রিয়ায় একটি কোষ তার নিজের প্রতিরূপ সৃষ্টি করে তাকেই কোষ বিভাজন বলে "।

কোষ বিভাজন তিনপ্রকার -

১/ আ্যমাইটোসিস কোষ বিভাজন

২/ মাইটোসিস কোষ বিভাজন

৩/ মায়োসিস কোষ বিভাজন

আম্যাইটোসিস কোষ বিভাজন : একে প্রত্যক্ষ কোষ বিভাজন বলা হয়। এই কোষ বিভাজন প্রক্রিয়ায় একটি মাতৃকোষ (Mother cell) কোনো প্রকার জটিল দশা ব্যতিরেকে সরাসরি বিভক্ত হয়ে দুটি অপত্য কোষের (Daughter cell) সৃষ্টি করে। সাধারণত অনুন্নত প্রাণীদের মধ্যে যেমন : ব্যাকটেরিয়া, সায়ানোব্যাকটেরিয়া, ইস্ট, অ্যামিবা, ইত্যাদি এককোষী প্রাণীতে সাধারণত এই প্রকারের কোষ বিভাজন দেখা যায়।

মাইটোসিস কোষ বিভাজন : একে সমীকরণিক কোষ বিভাজনও বলা হয়। এই কোষ বিভাজন প্রক্রিয়ায় একটি মাতৃ কোষ কয়েকটি জটিল দশার মাধ্যমে সমগুনসম্পন্ন ও সমান আকৃতির দুটি কোষে পরিণত হয়। এটি বেশ জটিল প্রকারের কোষ বিভাজন। প্রকৃত কোষী জীবদেহে এই প্রকারের কোষ বিভাজন হয়ে থাকে


ছবি : মাইটোসিস কোষ বিভাজন (Adapted from Wikipedia

এটির মাধ্যমে প্রজাতির স্বকীয় বৈশিষ্ট্যগুলো সংরক্ষিত থাকে এবং নতুন অপত্য কোষগুলো পূর্বের কোষের অনুরূপ বৈশিষ্ট্য লাভ করে।এটি প্রোফেজ, প্রো-মেটাফেজ, মেটাফেজ, অ্যানাফেজ, টেলোফেজ নামক জটিল দশাগুলোর মাধ্যমে সম্পন্ন হয়ে থাকে।

মায়োসিস কোষ বিভাজন : একে হ্রাসমূলক কোষ বিভাজন বলা হয়। এটি সাধারণত ডিপ্লয়েড জীবের জনন মাতৃকোষে অথবা হ্যাপ্লয়েড জীবের জাইগোটে ঘঠে থাকে। এই বিভাজন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে একটি মাতৃকোষ থেকে চারটি অপত্য কোষের সৃষ্টি হয়। এটি সবচেয়ে জটিল প্রকারের কোষ বিভাজন। এটির একটি অনন্য বৈশিষ্ট্য হলো- এটিতে ক্রসিং ওভার ঘঠে, যার ফলে প্রজাতির মধ্যে বৈচিত্র্য সৃষ্টি হয় এবং নতুন পরিবেশে ঠিকে থাকা অর্থাৎ অভিযোজন ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।

এটি মায়োসিস -১ ও মায়োসিস-২ নামক দুটি দশার মাধ্যমে সম্পন্ন হয় যেগুলো আবার প্রোফেজ-১,  মেটাফেজ-১, অ্যানাফেজ-১, টেলোফেজ-১ এবং প্রোফেজ-২, মেটাফেজ-২, অ্যানাফেজ-২, টেলোফেজ-২ নামক দশার মাধ্যমে সম্পন্ন হয়। এগুলোর মধ্যে প্রোফেজ-১ দশাটি খুবই দীর্ঘস্থায়ী দশা এবং এটি লেপ্টোটিন, জাইগোটিন, প্যাকাইটিন, ডিপ্লোটিন, ডায়াকাইনেসিস প্রভৃতি উপ পর্যায়ে বিভক্ত। এগুলোর মধ্যে প্যাকাইটিন উপ-পর্যায়েই ক্রসিং ওভার ঘঠে।

এই তিন প্রকারের কোষ বিভাজনের মাধ্যমেই একটি জীবের বংশবৃদ্ধি ঘঠে এবং দেহের ক্ষয় পূরণ হয়। আসলে কোষ বিভাজন একটি সুনিয়ন্ত্রিত প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে একটি কোষ হতে দুটি, দুটি কোষ হতে চারটি কোষের সৃষ্টি হয় এবং এভাবে নির্দিষ্ট নিয়মে কোষবিভাজন চলতে থাকে। কিন্তু কোনো কারণে এই নিয়ন্ত্রণ নষ্ট হয়ে গেলে কোষ বিভাজন অস্বাভাবিকভাবে চলতে থাকে, যার ফলস্বরূপ টিউমার,ক্যান্সার প্রভৃতি হয়ে থাকে।

Note : এখানে যেভাবে কোষ বিভাজনকে সহজভাবে উল্লেখ করা হয়েছে, ব্যাপারাটি আসলে সেরকম নয়।এগুলো অত্যন্ত জটিল প্রক্রিয়া যেখানে ইন্টারফেজ, M-ফেজ, কোষচক্র সহ আরো অনেক বিষয়াদি জড়িত আছে। বিস্তারিত জানতে ড. মোহাম্মদ আবুল হাসান স্যারের উচ্চ মাধ্যমিক জীববিজ্ঞান প্রথম পত্র বইটি পড়তে পারেন।

Post a Comment

0 Comments