নিডারিয়া (Cnidaria) পর্বের অন্তর্ভূক্ত এক আশ্চর্যজনক প্রাণী হচ্ছে " হাইড্রা "। ১৭০২ সালে বিজ্ঞানী Antony van Leeuwenhoek এটিকে আবিষ্কার করেন এবং ১৭৫৮ সালে ক্যারোলাস লিনিয়াস এটিকে নামকরণ করেন। এটি একটি দ্বিস্তরী প্রাণী (নিডারিয়া পর্বের প্রাণীরা দ্বিস্তরী) যাদের দেহপ্রাচীর এপিডার্মিস,মেসোগ্লিয়া (এটি কোনো কোষীয় স্তর নয়,জেলির ন্যায় স্বচ্ছ) ও গ্যাস্ট্রোডার্মিস নামক কোষস্তর দিয়ে গঠিত।
হাইড্রার ব্যাপক পরিচিতির পিছনে যে কারণটি মূখ্য ভূমিকা পালন করে তা হচ্ছে এর ব্যাপক " পুনরুৎপত্তি (Regeneration) ক্ষমতা "। এদের দেহে ইন্টারস্টিসিয়াল কোষ ( Interstitial Cell) নামক এক ধরনের বিশেষ কোষ রয়েছে, যা প্রয়োজন অনুসারে অন্য যেকোনো কোষে পরিবর্তিত হতে পারে। তাই হাইড্রাকে যদি আপনি কেটে কয়েক খন্ডে বিভক্ত করেন,তবে প্রত্যেকটি খন্ড একেকটি নতুন হাইড্রারূপে জন্ম নিবে ( গ্রিক রূপকথায় নয় মাথাওয়ালা এইরকম একটি প্রাণীর নাম পাওয়া যায় যাকে হাইড্রা ড্রাগন বলা হতো,এটির একটি মাথাকে কাটলে বহুমাথা সৃষ্টি হতো,এই প্রাণীটির নামানুসারেই হাইড্রার নামকরণ করা হয়) । এদের দেহে আরেক ধরনের বিশেষ কোষ থাকে যাদেরকে বলা হয় " নিডোসাইট কোষ (Cnidocyte cell) " ( নিডারিয়া পর্বের প্রাণীতে সাধারণত এই কোষ পাওয়া যায়)। এইসব কোষকে কাজে লাগিয়ে হাইড্রা শিকার ধরা,আত্মরক্ষা ও চলাফেরা করে। পাশাপাশি এসব কোষে বিষাক্ত হিপনোটক্সিন ( প্রোটিন এবং ফেনলের সমন্বয়ে গঠিত) থাকে,যা হাইড্রাকে আত্মরক্ষা ও শিকারে সাহায্য করে।
![]() |
ছবি : Hydra vulgaris (Adopted from Wikipedia) |
হাইড্রা সাধারণত মুক্তজীবী প্রাণী হিসেবে স্বাদু পানিতে বাস করে। পৃথিবীতে হাইড্রার প্রায় ৪০টি প্রজাতি আবিস্কৃত হয়েছে ( বাংলাদেশে এদের ৩টি প্রজাতি পাওয়া যায়)।
এদের দেহ সাধারণত ১-৩ সে.মি. লম্বা এবং ১ মিলিমিটার চওড়া হয়ে থাকে।দেহ প্রধানত হাইপোস্টোম (Hypostome,এখানে মুখছিদ্র থাকে), দেহকান্ড (Trunk, এখানে কর্ষিকা,মুকুল ও জননাঙ্গ অবস্থান করে ) এবং পাদ-চাকতির (Pedal disc) সমন্বয়ে গঠিত। এরা প্রধানত মাংসাশী (Carnivorous) প্রাণী। জলে বসবাসকারী বিভিন্ন ছোট ছোট প্রাণী যেমন : Cyclops, Daphnia, Annelids ইত্যাদি খেয়ে এরা জীবনধারণ করে।
হাইড্রার জনন সাধারণত - অযৌন ও যৌন জনন পদ্ধতিতে হয়ে থাকে। এদের চলন বেশ অনন্য।
হাইড্রা সাধারণত জলে নিমজ্জিত কোনো বস্তুর সাথে নেমাটোসিস্ট এর সাহায্য আটকে থাকে,তবে প্রয়োজন অনুযায়ী এরা লুপিং বা হামাগুড়ি,ডিগবাজী,গ্লাইডিং ইত্যাদি পদ্বতিতে চলতে পারে। হাইড্রার দেহে কোষভিত্তিক শ্রমবন্টন দেখা যায়।

0 Comments