Advertisement

ম্যালেরিয়া (Malaria)

" ম্যালেরিয়া " শব্দটি দুটি ইটালীয় শব্দ Mal (দূষিত) ও Aria (বাতাস) সমন্বয়ে গঠিত যার অর্থ দূষিত বাতাস।আসলে আগেকার দিনের মানুষের ধারণা ছিলো " দূষিত বায়ূর জন্য এই রোগ হয়ে থাকে "। কিন্তু ম্যালেরিয়া রোগের আসল কারণ হলো প্রোটোজোয়া জাতীয় প্লাজমোডিয়াম গনভূক্ত প্রায় ৬০টি পরজীবি যা মানুষসহ বিভিন্ন মেরুদণ্ডী প্রাণীদের দেহে ম্যালেরিয়া রোগের সৃষ্টি করে থাকে।

ম্যালেরিয়া রোগের জীবাণু (Plasmodium) একটি অন্তকোষীয় রক্তপরজীবী।এদের জীবনচক্রে দুটি পোষকের (মানুষ ও অ্যানোফিলিস মশকী) প্রয়োজন হয়। মানুষ এদের মাধ্যমিক পোষক (Intermediate Host) এবং অ্যনোফিলিস মশকী নির্দিষ্ট পোষক (Definitive Host)। মানুষের যকৃত কোষে এদের হেপাটিক সাইজোগনি এবং লোহিত রক্ত কণিকায় এরিথ্রোসাইটিক সাইজোগনি সম্পন্ন হয়।অপরদিকে অ্যানোফিলিস মশকীর দেহে গ্যামিটোগনি ( মশকীর ক্রপে) ও স্পোরোগনি ( ক্রপের বহিঃপ্রাচীরে) চক্র সম্পন্ন হয়।


ছবি : Plasmodium vivax (Collected from Wikipedia) 

ম্যালেরিয়ার পরজীবি মানবদেহে প্রবেশের দুই-তিন সপ্তাহের মধ্যে রোগ লক্ষণ প্রকাশ পায়। লক্ষণগুলো হলো-  

  • সাধারণত ৪৮ ঘন্টা পরপর জ্বর ( ১০৪° -১০৬° ফারেনহাইট) আসে ও ধীরে ধীরে ঘাম দিয়ে ছেড়ে যায়।
  •  ক্ষুধামন্দা
  •  খাবারে অনীহা
  • বমিবমি ভাব (Nausea) 
  • ঘুমের ব্যাঘাত ঘঠা
  • মাথা ব্যাথা
  • পেশিতে পেশিতে ব্যাথা,অস্থিসন্ধিতে ব্যাথা ও শীত অনুভূত হওয়া ইত্যাদি লক্ষন প্রকাশ পায়।

ম্যালেরিয়া পরজীবির বিভিন্ন প্রজাতির সুপ্তাবস্থা (রোগের জীবাণু দেহে প্রবেশের পর থেকে রোগ লক্ষণ প্রকাশ পাওয়ার আগ পর্যন্ত সময়কালকে সুপ্তাবস্থা বলে) বা সুপ্তিকাল বিভিন্ন হয়ে থাকে। যেমন :

Plasmodium vivax এর জন্য ১২-২০ দিন

Plasmodium malaria এর জন্য ১৮-৪০ দিন

Plasmodium falciparum এর জন্য ৮-১৫ দিন

Plasmodium ovale এর জন্য ১১-১৬ দিন ( উচ্চ মাধ্যমিক জীববিজ্ঞান -১ম পত্র, ড. মোহাম্মদ আবুল হাসান স্যার)।

উপরোল্লিখিত প্রজাতিগুলোর মধ্যে Plasmodium vivax এর বিস্তৃতি সবচেয়ে বেশি। 

ম্যালেরিয়া থেকে বাঁচতে হলে মশার কামড় থেকে বাঁচতে হবে, বিশেষকরে দিনের বেলায় মশার কামড় থেকে বাঁচতে হবে। এজন্য কয়েল, মশারী, মশারোধী স্প্রে ইত্যাদি ব্যবহার করা যেতে পারে।

ম্যালেরিয়া রোগের ঔষধ হিসেবে সিনকোনা গাছের বাকল হতে তৈরী " কুইনাইন "কে ব্যবহার করা হয়।ক্লোরোকুইন, কেমোকুইন, নিভাকুইন, ম্যাফ্লোকুইন, ম্যালারোন, ডক্সিসাইক্লিন, প্রোগানিল, প্যালাড্রিন, অ্যাভলোক্লোর, ম্যাপাক্রিন ইত্যাদি ঔষধ বাজারে পাওয়া যায় যা ম্যালেরিয়ার চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়।

Post a Comment

0 Comments